সিলেটের দর্শনীয় স্থানসমূহ: এ শীতকালে ঘুরে আসুন প্রকৃতি কন্যা সিলেটে

এই শীতে ঘুরে আসতে পারেন প্রকৃতি কন্যা সিলেটে। সিলেটের দর্শনীয় স্থানগুলোর সৌন্দর্য্য ও ঐতিহ্য সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন এই ব্লগে।

এই দেশে ঋতু বৈচিত্রে শীতকাল কম বেশি সবারই প্রিয়। শীতকালে অনেকেই ভ্রমণের জন্য বিভিন্ন দর্শনীয় স্থান খুজে থাকেন। বাংলাদেশের সিলেটে অনেকগুলো দর্শনীয় স্থান রয়েছে। এই শীতে ঘুরে আসতে পারেন সিলেটের এই দর্শনীয় স্থানগুলোতে যেগুলো সম্পর্কে এই ব্লগে আলোচনা করলাম।

প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি সিলেটের বেড়ানোর জায়গা অনেক রয়েছে। উঁচু-নিচু পাহাড় আর  চা বাগান পর্যটেকর  মন কেড়ে নেয়। ওপারে ভারত এপারে বাংলাদেশের লালাখাল, জাফলং, ডিবির বিল, বিছানাকান্দি আরো আছে পাথরে রাজ্য ভোলাগঞ্জ। এছাড়াও রয়েছে হযরত শাহজালাল আর শাহ পরানের মাজার।

বাংলাদেশের এমন ভ্রমণ রাজ্য আর কোথাও পাওয়া যাবে না। আর দেরি না করে এবারই ঘুরে আসুন প্রকৃতি কন্যা সিলেট থেকে।

লাক্কাতুরা চা বাগান

সিলেটের দর্শনীয় স্থান লাক্কাতুরা চা বাগান
লাক্কাতুরা চা বাগান, সিলেট

লাক্কাতুরা চা বাগান হচ্ছে সিলেটের দর্শনীয় স্থানগুলোর মধ্যে অন্যতম। সিলেটের শহর থেকে বিমান বন্দরে যেতে এই চা বাগান দেখতে পাওয়া যায়। চা বাগানটি দেখার জন্য প্রতিবছর অনেক মানুষ ভ্রমণে আসেন। ন্যাশনাল টি কোম্পানির মালিকানাধীন এ চা বাগানটি দেখতে খুবই সুন্দর এবং নিরাপদ।

কিভাবে যাবেন: সিলেট থেকে স্থানীয় পরিবহনে খুব সহজেই লাক্কাতুরা চা বাগানে যাওয়া যায়।

মালনিছড়া চা বাগান 

বাংলাদেশের সবচেয়ে পুরাতন চা বাগান মালনিছড়া চা বাগান। সিলেট শহর থেকে বিমানবন্দর যেতে দেখতে পাওয়া যায় মালনিছড়া চা বাগানটি। হার্ডসনের হাত ধরেই ১৮৫৪ সালে যাত্রা শুরু করে মালনিছড়া চা বাগানটি। উঁচু-নিচু জায়গায় দেখতে এ চা বাগানটি খুবই সুন্দর। এ চা বাগানে রয়েছে প্রচুর বানর।

কিভাবে যাবেন: সিলেট শহরের আম্বরখানা পয়েন্ট থেকে রিকসা, অটোরিকশা বা সিএনজি ভাড়া করে মালনিছড়া চা বাগান যেতে পারবেন।

হযরত শাহজালাল মাজার

হযরত শাহজালালের মাজারটি ও সিলেটের অন্যতম দর্শনীয় স্থান। ১৩০৩ সালে হযরত শাহজালালের হাতে এ অঞ্চলটি বিজিত হয়। ৩১৩ জন শীষ্য সহ ইসলাম ধর্ম প্রচার করার উদ্দেশ্যে তুরস্কের কনিয়া শহর থেকে তিনি এ দেশে আসেন। ১৩৪০ খ্রিস্টাব্দে তাঁর মৃত্যুর পর তাকে এখানেই সমাহিত করা হয়।

হযরত শাহজালালের মাজার কমপ্লেক্সর ভেতরে শত শত জালালী কবুতর, পুকুর ভর্তি গজার মাছ ছাড়াও হযরত শাহজালালের ব্যবহৃত তলোয়ারটি আছে। হযরত শাহজালালের মাজারটি দেখার জন্য প্রতিবছরে প্রচুর মানুষ ভিড় করে থাকেন।

হযরত শাহজালাল মাজার
হযরত শাহজালাল মাজার

কিভাবে যাবেন: সিলেট রেলস্টেশন অথবা কদমতলী বাস স্ট্যান্ড এ নেমে রিকসা বা সিএনজি অটো রিকসা যোগে মাজারে যাওয়া যায়। সিএনজি  ভাড়া ৮০ থেকে ১০০ টাকা, রিকসা ভাড়া ২০ থেকে ২৫ টাকা।

সুরমা নদী পার হয়ে মূল শহরের মাজারে যাওয়া যায়। রিকসা বা সিএনজিতে ৩০ থেকে ৩৫ টাকা ভাড়া লাগবে।

হযরত শাহপরানের মাজার

হযরত শাহপরানের মাজার
হযরত শাহপরানের মাজার

হযরত শাহজালালের ভাগ্নে ছিলেন হযরত শাহ পরান। এ মাজারটি অবস্থিত শহরের পূর্ব দিকটায় দক্ষিণ গাছের খাদিম পাড়ায়। এ মাজারে রয়েছে বিশাল একটি বটগাছ। প্রতিদিন হাজার হাজার ভক্তরা আসেন হযরত শাহপরানের মাজারে।

কিভাবে যাবেন: সিলেট শহরের যে কোন প্রান্ত থেকে  সিএনজি, রিকসা বা অটো রিকসা করে খুব সহজেই হযরত শাহপরানের  মাজারে যেতে পারবেন।

আরও পড়তে পারেন: বান্দরবান জেলা কিসের জন্য বিখ্যাত

জাফলং

জাফলং - সিলেটের দর্শনীয় স্থান
জাফলং

সিলেট বেড়াতে গিয়ে কেউ জাফলং যায়নি হতেই পারেনা। কারণ সিলেটের সবচেয়ে সুন্দর ও মনোরম টুরিস্ট স্পটের মধ্যে জাফলং একটি। সিলেট জেলার গোয়াইনঘাট উপজেলায় অবস্থিত জাফলং যা সিলেট শহর থেকে ৬২ কিলোমিটার উত্তর পূর্ব দিকে ভারতের মেঘালয় সীমান্ত ঘেঁষে খাসিয়া জৈন্তা পাহাড়ের পাদদেশে অবস্থিত। জাফলং প্রকৃতির কন্যা হিসেবে পরিচিত।

ওপারে পাহাড় এপারে নদী পাহাড়ের বুক চিরে বয়ে চলেছে ঝর্ণা আবার নদীর বুকে সাজানো নানা রঙের পাথর। প্রকৃতির এই অপরূপ সৌন্দর্য আর কোথাও পাবেন না জাফলং ছাড়া। ঝুলন্ত ডাউকি ব্রিজ, উঁচু উঁচু পাহাড়, আকাশে সাদা মেঘের ভেলা।

এখানে চলে ঋতু বদলের পালা এক এক ঋতুতে এক এক রূপের প্রকাশ ঘটায়,যা পর্যটকদের ভ্রমণের জন্য সারা বছরই আগ্রহী করে তুলে। সিলেট ভ্রমণে এসে জাফলং এ না আসলে ভ্রমণই যেন অপূর্ণ থেকে যায়।

কিভাবে যাবেন: সিলেট থেকে সরাসরি জাফলং যেতে সময় লাগবে প্রায় দেড় থেকে ২ ঘন্টা। সিএনজি, বাস ও লেগুনা জাফলং যেতে পারেন। সিলেট থেকে জাফলং এর দূরত্ব ৫০ কিলোমিটার।

আলী আমজাদের ঘড়িঘর

আলী আমজাদের ঘড়িঘর
আলী আমজাদের ঘড়িঘর

ক্বিন ব্রিজের উত্তর পাড়ে সুরমা নদীর তীরে চাঁদনীঘাটে ঘড়িঘর অবস্থিত। কুলাইডার পৃন্থিমপাশার জমিদার আলী আমজাদ খান ঘড়িঘরটি নির্মাণ করেছিলেন। কথিত আছে যে, তিনি এটি নির্মাণ করেছিলেন দিল্লির চাঁদনীচকের শাহজাদী জাহানারা কর্তৃক নির্মিত ঘড়িঘর দেখে।

কিভাবে যাবেন: সিলেট রেলওয়ে স্টেশন ও কদমতলী কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল হতে আলী আজমদের ঘড়িঘর  মাত্র এক কিলোমিটার দূরে। সিএনজি, অটোরিকশা বা পায়ে হেঁটে আপনি যেতে পারবেন।

সুরমা নদী

বাংলাদেশের অন্যতম নদী সুরমা নদীটি বয়ে গেছে সিলেট শহরের দক্ষিণ পাশে। সুরমা নদীর সৌন্দর্য উপভোগ করা যায় সিলেট শহরের চাঁদনীঘাট থেকে। অতিরিক্ত দূষণের কারণে দিন দিন নদীটি দূষিত হয়ে পড়ায় এর সৌন্দর্যে ভাটা পড়েছে।

শুকতারা প্রকৃতি নিবাস

সিলেটের ৭ একর জায়গা জুড়ে খাদিমনগরের উদ্দীনের টিলায় সবুজে ঘেরা এক স্বর্গ সুখ তারা  প্রকৃতির নিবাস। এ জায়গাটি দেখতে খুব সুন্দর। সিলেটে যারা ভ্রমণে যান তাতে থাকার জন্য এ জায়গাটি খুবই উৎকৃষ্ট।

ক্বীন ব্রিজ/সুরমা সেতু 

১৯৩৬ সালে লোহার তৈরি ক্বিন ব্রিজটি নির্মাণ করা হয়। এটি সুরমা সেতু নামে বেশ পরিচিত।  ইংরেজ গভর্নর মাইকেল ক্বিনের নামে নামকরণ করা হয়। এই সেতুটি ১১৫০ ফুট লম্বা এবং ১৮ ফুট প্রস্থ এই সেতুটি দেখতে ধনুকের মত বাঁকানো।স্বাধীনতার যুদ্ধের সময় ১৯৭১ সালে পাক হানাদার বাহিনী সেতুটির একাংশ উড়িয়ে দেয়। বাংলাদেশ রেলওয়ের অর্থায়নে বিধ্বস্ত অংশটি ১৯৭৭ সালে পুনঃ নির্মাণ করা হয়।

কিভাবে যাবেন: সিলেট শহরের যেকোন স্থান থেকে রিকশা,সিএনজি ও অটো রিকশা দিয়ে ক্বীন ব্রীজেখুব সহজেই যাওয়া যায়। সিলেট রেলস্টেশন থেকে মাত্র আধা কিলোমিটার দূরে আপনি হেটে ও ঘুরে আসতে পারবেন।

ডিবির বিল

সিলেট শহর থেকে প্রায় ৪২ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত ডিবির বিল।বাংলাদেশ ভারত সীমান্তবর্তী মেঘালয় পাহাড়ের পাদদেশে চারটি বিল রয়েছে। বিলগুলো হচ্ছে ডিবি বিল, কেন্দ্রী বিল, হরফফাটা বিল ও ইয়াম বিল। সিলেটের জৈন্তাপুর উপজেলার উত্তর পূর্ব দিকে অবস্থিত পাশাপাশি চারটি বিল।

এ বিলের পানিতে রয়েছে শত সহস্র লাল শাপলা। লাল শাপলার কারণে বিলের জল প্রায় দেখা যায় না। সেখানে দেখা মিলবে চোখজুড়ানো এমন দৃশ্যের। ডিবির বিল নামে স্থানীয়দের কাছে পরিচিতি পেয়েছে। পড়ন্ত রোদ পড়ার আগে ডিবির বিলের আসল সৌন্দর্য দেখতে যেতে হবে।

কিভাবে যাবেন: সিলেট থেকে লোকাল বাসে প্রথমে লালাখাল বাজর সেখান থেকে ডিবির বিল যাওয়া যায়।

লালাখাল

লালাখাল - সিলেটের দর্শনীয় স্থান
লালাখাল, Image Source: Kishor Alo

লালাখাল হচ্ছে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাতের স্থান। এটি সিলেট জেলার জৈন্তাপুর উপজেলায় অবস্থিত। স্বচ্ছ নীল জলের লালাখাল সিলেটের সুন্দরতম দর্শনীয় স্থানগুলোর একটি।

স্পিড বোট ও নৌকা দিয়ে ঘুরে দেখতে পারেন লালাখাল। লালাখাল যাওয়ার পথে আপনার দুই চোখ সৌন্দর্য দেখতে দেখতে ক্লান্ত হয়ে যাবেন কিন্তু সৌন্দর্য দেখার শেষ হবে না।

৪০ থেকে ৫০ মিনিট যাত্রা শেষে আপনি পৌঁছে যাবেন লালখাল চা বাগানের ফ্যাক্টরির ঘাটে। লালাখালের অবস্থান হলো ভারতের চেরাপুঞ্জির ঠিক নিচেই। প্রতিবছরে রাতের সৌন্দর্য্যে ভরপুর লালাখাল দেখতে ভিড় করেন পর্যটকরা।

কিভাবে যাবেন: সিলেট শহরে নেমে সেখান থেকে জাফলংয়ের গাড়িতে উঠে সারিঘাট নেমে যাবেন যেতে পারেন। সারিঘাট থেকে লালাখালে যাওয়ার সিএনজি চালিত অটোরিকশা পাবেন। নদীপথে লালাখালে যেতে চান তবে এখানে ইঞ্জিন চালিত বিভিন্ন ট্রলার, নৌকা ভাড়ায় পাবেন।

পরিশেষে, শীতকালে ভ্রমণের জন্য সিলেট জেলা উপযুক্ত। সিলেট জেলাতে বিভিন্ন স্থানে ভ্রমণ করার জন্য বিভিন্ন রকমের পর্যটন কেন্দ্র রয়েছে। এসব পর্যটন কেন্দ্রে প্রতি বছরে বাংলাদেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে হাজার হাজার পর্যটকরা এসে ভ্রমণ করেন।

Similar Posts

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।