নিঝুম দ্বীপ কোথায় অবস্থিত, এর অপর নাম কি ও কেন বিখ্যাত

নিঝুম দ্বীপ বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিম উপকূলে, বঙ্গোপসাগরের মাঝে মেঘনা নদীর মোহনায় অবস্থিত। ১৯৬০ এর দশকে বঙ্গোপসাগরের জোয়ারের ধাক্কায় এই দ্বীপটি গড়ে ওঠে।

নিঝুম দ্বীপ নোয়াখালী জেলার হাতিয়া উপজেলার একটি ছোট্ট দ্বীপ। এই দ্বীপটি কয়েকটি চরের সমন্বয়ে গঠিত। শীতকালে এই দ্বীপ হয়ে উঠে পর্যটকদের জন্য অত্যন্ত আকর্ষণীয় একটি ভ্রমণের স্থান।

কারণ শীতকালে এখানকার প্রকৃতি ধারণ করে এক অপরূপ সাজে। এখানে দেখা যায়, বিভিন্ন বুনো প্রাণী, অতিথি পাখি, চিত্রা হরিণ, নানা প্রজাতির হাঁস, শুকর ও বানর।

এই ব্লগে জানব, নিঝুম দ্বীপ সম্পর্কে কিছু তথ্য, এটি কোথায় অবস্থিত, এর নামকরণ ও অন্যান্য প্রাসঙ্গিক তথ্য।

নিঝুম দ্বীপ কোথায় অবস্থিত

নিঝুম দ্বীপ বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিম উপকূলে, বঙ্গোপসাগরের মাঝে মেঘনা নদীর মোহনায় অবস্থিত। ১৯৬০ এর দশকে বঙ্গোপসাগরের জোয়ারের ধাক্কায় এই দ্বীপটি গড়ে ওঠে।

নিঝুম দ্বীপের আয়তন প্রায় ১৬ বর্গকিলোমিটার। ২০২৩ সালের হিসাবে, নিঝুম দ্বীপের বর্তমান লোক সংখ্যা প্রায় ১০,০০০। এর মধ্যে বেশিরভাগই জেলে, বাথানিয়া, এবং কৃষক। দ্বীপটিতে প্রায় ২০০ টি পরিবার বাস করে।

নিঝুম দ্বীপ কোথায় অবস্থিত

নয়নাভিরাম সৌন্দর্যে ভরপুর নোয়াখালীর হাতিয়ার নিঝুমদ্বীপ। বঙ্গোপসাগরের কোলঘেঁষে জেগে ওঠা এই দ্বীপটির একদিকে বঙ্গোপসাগরের উত্তাল তরঙ্গ, অন্যদিকে ছুটে আসা হিমেল হাওয়া আর সবুজের সুবিশাল ক্যানভাস। মনে হবে যেন চিত্রশিল্পী সুনিপুণভাবে জল রং তুলি দিয়ে এঁকেছেন।

আরও পড়ুন:

নিঝুম দ্বীপের অপর নাম কি

নিঝুম দ্বীপের অপর নাম হচ্ছে বাল্লার চর। নিঝুম দ্বীপ গঠনের শুরুর দিকে কিছু সংখ্যক জেলে দ্বীপের বালুর উচু ঢিবি দেখে এর নাম দেন বালুয়ার চর। যা পরবর্তীতে বাউলার চর হয়ে বাল্লার চরে রুপ নেয়। এখনও অনেকে একে বাল্লার চর বলে থাকে।

তখনকার সময় একদল জরিপকারী দ্বীপটি জরিপ করতে আসেন। তাদের সহায়তা করেন ওসমান নামের একজন বাথানিয়া (মহিষের পাল দেখাশুনাকারী)। তখন জরিপকারীরা এই দ্বীপের নাম রাখেন চর ওসমান।

১৯৭০ সালের ঘুর্ণিঝড়ে দ্বীপটি জনমানবহীন হয়ে পড়ে। দীর্ঘ ৩ বছর এখানে কোন বসতি গড়ে ওঠেনি। পরে ১৯৭৩ সালে হাতিয়ার তৎকালীন সাংসদ মরহুম আমিরুল ইসলাম কালাম দ্বীপটিতে যান। দ্বীপের শান্ত সমাহিত ও বিদগ্ধ সৌন্দর্য্যে মুগ্ধ হয়ে তিনি দ্বীপটির নাম রাখেন নিঝুমদ্বীপ। তখন থেকে এটি জনমনে নিঝুমদ্বীপ হিসেবে পরিচিতি পায়।

আবার অনেকে মতে, নিঝুম দ্বীপের আদি নাম ছিল ইছামতি। এ দ্বীপের তৎকালীন বাসিন্দারা প্রচুর পরিমানে ইছা তথা চিংড়ি আহরণ করে মতির মত অর্থ উপার্জন করতো। তাই এর নাম রাখা হয়েছিল ইছামতি।

এর মধ্যে বেশিরভাগই জেলে, বাথানিয়া, এবং কৃষক। দ্বীপটিতে প্রায় ২০০ টি পরিবার বাস করে। নিঝুম দ্বীপের জনসংখ্যা ক্রমবর্ধমান। ২০১১ সালের আদমশুমারিতে দ্বীপটির জনসংখ্যা ছিল প্রায় ৫,০০০। ২০২৩ সালের হিসাবে দ্বীপটির জনসংখ্যা দ্বিগুণেরও বেশি হয়েছে। নিঝুম দ্বীপের জনসংখ্যা বৃদ্ধি দ্বীপের পরিবেশের উপর চাপ সৃষ্টি করছে। দ্বীপের বনজ সম্পদ এবং জল সম্পদ হ্রাস পাচ্ছে। এছাড়াও, দ্বীপের পরিবেশ দূষণের ঝুঁকি বাড়ছে।

নিঝুম দ্বীপ কেন বিখ্যাত

নিঝুম দ্বীপ একমাত্র তার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য এবং বন্য প্রাণীদের জন্য বিখ্যাত। এখানে রয়েছে বিস্তৃত সমুদ্র সৈকত, প্রবাল প্রাচীর, এবং বিভিন্ন ধরনের গাছপালা। তাছাড়া এখানে দেখা যায় বিভিন্ন প্রজাতির পাখি, চিত্রা হরিণ, বন্য কুকুর, বনবেড়াল ও বিভিন্ন জলজ প্রাণী।

নিঝুম দ্বীপের বিখ্যাত হওয়ার কিছু কারণ বিস্তারিতভাবে দেওয়া হল:

১. প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য

নিঝুম দ্বীপের প্রকৃতি অত্যন্ত মনোরম। এখানে রয়েছে বিস্তৃত সমুদ্র সৈকত, প্রবাল প্রাচীর, এবং বিভিন্ন ধরনের গাছপালা ও প্রাণী। দ্বীপের সমুদ্র সৈকতগুলি সাদা বালি দিয়ে তৈরি এবং অত্যন্ত পরিষ্কার।

প্রবাল প্রাচীরগুলি বিভিন্ন রঙের এবং এখানে বিভিন্ন ধরনের মাছ ও সামুদ্রিক প্রাণী দেখা যায়। দ্বীপের গাছপালা ও প্রাণীও অত্যন্ত বৈচিত্র্যময়।

নিঝুম দ্বীপ কেন বিখ্যাত

নিঝুম দ্বীপ গেলে যে প্রাণী বেশি দেখা যায়

নিঝুম দ্বীপ গেলে কোন প্রাণী বেশি দেখা যায় তার তালিকা নিচে দেয়া হলো:

  • স্তন্যপায়ী প্রাণী: চিত্রা হরিণ, মহিষ, বন্য কুকুর, সাপ, বনবেড়াল, বানর
  • পাখি: মাছরাঙা, চিল, সোয়ালো, বুলবুলি, হট্টিটি, ইত্যাদি
  • সরীসৃপ: অজগর সাপ, সামুদ্রিক কচ্ছপ
  • জলজ প্রাণী: বিভিন্ন প্রজাতির মাছ, কাঁকড়া, ইত্যাদি

২. চিত্রা হরিণের আবাসস্থল

নিঝুম দ্বীপ চিত্রা হরিণের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ আবাসস্থল। এখানে প্রায় ২০ হাজারেরও বেশি চিত্রা হরিণ রয়েছে। চিত্রা হরিণ একটি বিপন্ন প্রজাতি এবং নিঝুম দ্বীপ তাদের জন্য একটি নিরাপদ আবাসস্থল।

৩. নিঝুম দ্বীপের দর্শনীয় স্থানসমূহ

নিঝুম দ্বীপের দর্শনীয় জিনিস ও স্থানগুলোর মধ্যে আছে এখানকার সুমুদ্র সৈকত, কাঠের সেতু, প্রবাল প্রাচীর, চিত্রা হরিণ ও প্রাচীন বৌদ্ধ মন্দির।

৪. ঐতিহাসিক গুরুত্ব

নিঝুম দ্বীপের ইতিহাস বেশ পুরনো। এখানে প্রাচীনকালের কিছু নিদর্শন পাওয়া গেছে। দ্বীপের উত্তর-পূর্ব অংশে একটি প্রাচীন বৌদ্ধ মন্দির রয়েছে। এই মন্দিরটি ১৫০০ বছরের পুরানো বলে মনে করা হয়।

এসব কারণেই নিঝুম দ্বীপ একটি জনপ্রিয় পর্যটন গন্তব্য। প্রতি বছর হাজার হাজার পর্যটক নিঝুম দ্বীপ ভ্রমণ করে।

নিঝুম দ্বীপ নিয়ে সাধারণ কিছু প্রশ্নের উত্তর

নিঝুম দ্বীপ মেঘনা নদীর মোহনায় অবস্থিত।

নিঝুম দ্বীপের অপর নাম হচ্ছে বাল্লার চর।

নিঝুম দ্বীপের পূর্ব নাম ছিল “চর-ওসমান”। কথিত আছে একদল জরিপকারী দ্বীপটি জরিপ করতে আসেন। তাদের সহায়তা করেন ওসমান নামের একজন বাথানিয়া (মহিষের পাল দেখাশুনাকারী)। তখন থেকে জরিপকারীরা এই দ্বীপের নাম রাখেন চর ওসমান।

নোয়াখালী জেলাকে নিঝুম দ্বীপের দেশ বলা হয়।

নিঝুম দ্বীপে সবচেয়ে বেশি দেখা যায় হরিণ ও মহিষ। এই দ্বীপে হরিণের সংখ্যা প্রায় ২২,০০০। হরিণ ছাড়াও এখানে আরও অনেক ধরনের প্রাণী দেখা যায়, যার মধ্যে রয়েছে সারস, মাছরাঙা, সোয়ালো, বুলবুলি, হট্টিটি, চিল, আবাবিল, বন্য কুকুর, সাপ, বনবেড়াল ইত্যাদি।

Similar Posts

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।