প্রতাপপুর জমিদার বাড়ি ভ্রমণ গাইড – কিভাবে যাবেন, কোথায় থাকবেন ও টিপস

প্রতাপপুর জমিদার বাড়ি বেড়াতে যেতে চাইলে কিভাবে যাবেন, কি কি দেখবেন, কোথায় থাকবেন এই নিয়ে বিস্তারিত জানুন এই ট্রাভেল গাইডে।

প্রতাপপুর জমিদার বাড়িতে ভ্রমণ করতে চাচ্ছেন? সঠিক ভ্রমণ গাইড পেলে খুব সহজেই আপনারা প্রতাপুর জমিদার বাড়ি ভ্রমণ করতে পারবেন।

চট্টগ্রাম বিভাগের অন্তর্ভুক্ত ফেনী জেলার দাগনভূঞা উপজেলায় অবস্থিত প্রতাপপুর জমিদার বাড়ির ঐতিহ্য ও ইতিহাসের জন্য বর্তমানে একটি জনপ্রিয় দর্শনীয় স্থানে পরিণত হয়েছে।

তবে সঠিক ভ্রমণ গাইড এর অভাবেই অনেকেই প্রতাপপুর জমিদার বাড়িতে কোন সময়ে গেলে ভালো হবে, কিভাবে যাবেন ,কোথায় থাকবেন , কি খাবেন এ সকল বিষয় নিয়ে ভাবনায় পড়ে যান।

আর তাই আজকে আমরা প্রতাপপুর জমিদার বাড়ি ভ্রমণ গাইড নিয়ে কিছু বিস্তারিত আলোচনা করব।

প্রতাপপুর জমিদার বাড়ি

প্রতাপপুর জমিদার বাড়ি বাংলাদেশের একটি ঐতিহাসিক জমিদার বাড়ি যা ফেনী জেলার দাগনভূঞা উপজেলায় অবস্থিত।

এই প্রতাপপুর জমিদার বাড়িটি প্রায় ১৩ একর জায়গা জুড়ে নির্মাণ করা হয়েছে এবং এখানে প্রায় ১০ টি ভবন এবং ১৩ টি পুকুর ও ৫টি পাকা ঘাট বাঁধানো পুকুর রয়েছে।

এই প্রতাপপুর জমিদার বাড়িটি তিন কড়ি সাহার দুটি পুত্র রামসুন্দর এবং রামচন্দ্র সাহা ১৭৬০ সালে নির্মাণ করেছে  এবং স্থানীয়দের কাছে এটি বড় বাড়ি বা রাজবাড়ী নামেও পরিচিত।

বর্তমানে এই প্রতাপপুর জমিদার বাড়িটির কোনো সরকারি বা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের তত্ত্বাবধানে না থাকায় প্রায় জীর্ণশীর্ণ নিরিবিলি হয়ে পড়েছে , ভবনগুলো প্রায় ধসে গেছে বা ভেঙে গিয়েছে এবং লতা পাতা দিয়ে ঘিরে আছে।

প্রতাপপুর জমিদার বাড়িটি একটি ঐতিহাসিক নিদর্শন এবং এটি বাংলাদেশের ইতিহাস ও সংস্কৃতির একটি অমূল্য সম্পদ।

প্রতাপপুর জমিদার বাড়ি কিভাবে যাবেন

প্রতাপপুর জমিদার বাড়ি ঢাকা থেকে প্রায় ৬০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। ঢাকা থেকে প্রতাপপুর জমিদার বাড়িতে ভ্রমণ করার ক্ষেত্রে আপনাদের সর্বোচ্চ ৩০০ থেকে ৫০০ টাকা পর্যন্ত খরচ হতে পারে।

প্রতাপপুর জমিদার বাড়ি সারা বছরই খোলা থাকে তবে শীতকালে আবহাওয়া মনোরম থাকে বলে এই সময়টি ভ্রমণের জন্য সবচেয়ে ভালো।

চলুন জেনে নেয়া যাক বাস, ট্রেনে বা নিজস্ব গাড়ি অর্থাৎ প্রাইভেট কারে করে কিভাবে ঢাকা থেকে ফেনী জেলার প্রতাপপুর জমিদার বাড়িতে যাবেন।

বাসে

ঢাকা থেকে ফেনীগামী যেকোনো বাসে করে ফেনী শহরে যেতে হবে। ফেনী শহরের মহিপাল বাস স্ট্যান্ড থেকে গিয়ে নোয়াখালীগামী সুগন্ধা কিং বাসে করে সোবার হাট বাজারে যেতে হবে এবং বাসের ভাড়া হবে ২০ থেকে ২৫ টাকা পর্যন্ত।

সোবার হাট বাজার থেকে প্রতাপপুর বাজারে যাওয়ার সিএনজি পাওয়া যায়। প্রতাপপুর বাজারের পাশেই প্রতাপপুর জমিদার বাড়ি অবস্থিত।

ট্রেনে

ঢাকা থেকে ফেনীগামী যেকোনো ট্রেনে করে ফেনী রেলওয়ে স্টেশনে যেতে হবে। ফেনী রেলওয়ে স্টেশন থেকে সোবার হাট বাজার যাওয়ার সিএনজি পাওয়া যায় এবং সোবার হাট বাজার থেকে প্রতাপপুর বাজারে যাওয়ার সিএনজি পাওয়া যায়।

প্রতাপপুর বাজারের পাশেই নামতে হবে যেখানে প্রতাপপুর জমিদার বাড়ি অবস্থিত।

প্রাইভেট গাড়িতে

ঢাকা থেকে প্রতাপপুর জমিদার বাড়ি যাওয়ার জন্য ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক ধরে ফেনী হয়ে দাগনভূঞা উপজেলায় যেতে হবে।

দাগনভূঞা উপজেলার প্রতাপপুর গ্রামে প্রতাপপুর বাজারের ঠিক পাশেই প্রতাপপুর জমিদার বাড়ি অবস্থিত।

কোথায় থাকবেন

প্রতাপপুর জমিদার বাড়ির আশেপাশে থাকার জন্য বেশ কয়েকটি হোটেল রয়েছে যেমন সোনাগাজী হোটেল, হোটেল গাজী ইন্টারন্যাশনাল , সোনাগাজী রিসোর্ট , প্রতাপপুর হোটেল , মিডনাইট ইত্যাদি।

তবে ফেনীর বিভিন্ন আবাসিক হোটেল ছাড়াও অনুমতি থাকলে পানি উন্নয়ন বোর্ডের রেস্ট হাউস , জেলা পরিষদের ডাক বাংলো, পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির রেস্ট হাউস ইত্যাদি স্থানগুলোতে থাকার জন্য রাত্রি যাপন করতে পারবেন।

এছাড়াও আপনি যদি প্রকৃতির কাছাকাছি থাকতে চান তাহলে প্রতাপপুর জমিদার বাড়ির পাশে অবস্থিত প্রতাপপুর বনবিহারের কটেজ গুলোতে থাকতে পারেন।

এই বনবিহারের কটেজ গুলোতে থাকার খরচ অন্যান্য আবাসিক হোটেলের চেয়ে তুলনামূলকভাবে কম।

তবে সবচেয়ে ভালো হয় প্রতাপপুর জমিদার বাড়িতে যাওয়ার আগে যদি আপনি হোটেল বুকিং করে নিতে পারেন ; বিশেষ করে যদি আপনি ছুটির দিনে যান।

স্থানীয় রেস্টুরেন্টস

প্রতাপপুর জমিদার বাড়ির আশেপাশে অনেক রেস্টুরেন্ট এবং রেস্তোরা রয়েছে যেখানে প্রতাপপুর জমিদার বাড়ির স্থানীয় এবং ফেনীর বিখ্যাত ও সুস্বাদু খাবার পাওয়া যায়।

প্রতাপপুর জমিদার বাড়ির স্থানীয় রেস্টুরেন্ট গুলোর মধ্যে রয়েছে-

  • মেজবান রেস্টুরেন্ট;
  • কুটুমবাড়ি রেস্তোরাঁ;
  • অতিথি রেস্টুরেন্ট এন্ড বিরিয়ানি হাউস;
  • নবি রেস্টুরেন্ট এন্ড বিরিয়ানি হাউজ;
  • আবার খাবো রেস্টুরেন্ট;
  • কুঁড়েঘর কাবাব এন্ড রেস্টুরেন্ট;
  • ইস্টিশন রেস্টুরেন্ট অ্যান্ড কনভেনশন;
  • মোহনা হোটেল এন্ড রেস্টুরেন্ট;
  • কাশেম রেস্টুরেন্ট ইত্যাদি।

এই স্থানীয় রেস্টুরেন্ট গুলোতে এখানকার বিভিন্ন স্থানীয় খাবার ছাড়াও সুলভ মূল্যে বিভিন্ন ধরনের খাবার পাওয়া যায়।

প্রতাপপুর জমিদার বাড়িতে আগত দর্শনার্থীরা এই আশেপাশের রেস্টুরেন্ট গুলোতে বিভিন্ন ধরনের সুস্বাদু খাবারের জন্য ভিড় করে থাকে।

স্থানীয় খাবার

প্রতাপপুর জমিদার বাড়ির স্থানীয় খাবারের তালিকায় আপনি ফেনী জেলার বিখ্যাত ও জনপ্রিয় ঐতিহ্যবাহী খাবার গুলোই পাবেন।

প্রতাপপুর জমিদার বাড়ির স্থানীয় খাবার গুলোর মধ্যে রয়েছে ভাত, শুটকি ভুনা, পান্তুয়া পিঠা, খিলি পিঠা, খন্ডলের মিষ্টি, মহিষের দুধের ঘি, কাঁটা বেগুন, রূপচাঁদা মাছ, খোলাজা পিঠা ইত্যাদি বিভিন্ন ধরনের সুস্বাদু খাবার।

এগুলো সাধারণত ফেনী জেলার বিখ্যাত কিছু খাবার যা প্রতাপপুর জমিদার বাড়ি স্থানীয় খাবারের তালিকায় পাওয়া যায়।

স্থানীয় শিষ্টাচার এবং নিয়মকানুন

প্রতাপপুর জমিদার বাড়ি বাংলাদেশের একটি ঐতিহাসিক স্থাপনা। এই বাড়িটির একটি দীর্ঘ ও সমৃদ্ধ ইতিহাস রয়েছে এবং এর সাথে জড়িয়ে আছে অনেক গল্প ও ঐতিহ্য।

প্রতাপপুর জমিদার বাড়ির কিছু স্থানীয় শিষ্টাচার ও নিয়ম কানুন রয়েছে এগুলো হলো-

পোশাক

প্রতাপপুর জমিদার বাড়ির স্থানীয় শিষ্টাচার ও নিয়ম কানুন অনুযায়ী স্থানীয় মানুষরা খুবই ধর্মভীরু হয়ে থাকে এবং তাদের পোশাক আশাকেও শালীনতা লক্ষ্য করা যায়।

ভদ্রতা

প্রতাপপুর জমিদার বাড়িতে প্রবেশের সময় অবশ্যই ভদ্র আচরণ করতে হবে এবং জমিদার বাড়ির পরিবেশকে সম্মান করতে হবে।

প্রতাপপুর জমিদার বাড়ির স্থানীয় লোকদের মধ্যেও এই ভদ্রতা লক্ষ্য করা যায়।

চলাফেরা

প্রতাপপুর জমিদার বাড়ির কিছু স্থানীয় নিয়ম অনুযায়ী জমিদার বাড়িতে প্রবেশের পর ধীরে ধীরে চলাফেরা করতে হবে এবং জমিদার বাড়ির আসবাবপত্র ও স্থাপত্যের কোন ধরনের ক্ষতি করা যাবে না।

খাবার

স্থানীয় শিষ্টাচার এবং নিয়ম অনুযায়ী প্রতাপপুর জমিদার বাড়িতে খাবার খাওয়ার সময় অবশ্যই টেবিল ম্যানার মেনে চলতে হবে এবং খাবার খাওয়ার সময় উচ্চস্বরে কথা বলা যাবে না।

কথাবার্তা

এখানকার স্থানীয় শিষ্টাচার ও নিয়ম অনুযায়ী জমিদার বাড়িতে উচ্চস্বরে কথা বলা যাবে না এবং এর পরিবেশকে শান্ত ও মনোরম রাখতে হবে।

এছাড়াও প্রতাপপুর জমিদার বাড়িতে ভ্রমণের ক্ষেত্রে কিছু বিশেষ নিয়মকানুন মেনে চলতে হবে যেমন,

  • জমিদার বাড়ির ভিতরে ক্যামেরা নিয়ে প্রবেশ করা যাবে না।
  • জমিদার বাড়ির ভেতরে ধূমপান করা যাবে না।
  • জমিদার বাড়ির ভিতরে কোন ধরনের খাবার বা পানীয় নেয়া যাবে না।
  • জমিদার বাড়ির ভিতর জুতা খুলে প্রবেশ করতে হবে।
  • জমিদার বাড়ির দেয়াল ও আসবাবপত্রের কোনরকম ক্ষতি করা যাবে না।
  • প্রয়োজনে ভ্রমণ গাইড এর সহায়তা নিতে হবে।

এই স্থানীয় শিষ্টাচার ও নিয়ম কানুন গুলো মেনে চললে প্রতাপপুর জমিদার বাড়ির সৌন্দর্য ও ঐতিহ্য রক্ষা করা সম্ভব হবে বলেই এ ধরনের নিয়ম কানুন তৈরি করা হয়েছে এবং দর্শনার্থীদের অবশ্যই এগুলো মেনে চলতে হবে।

স্থানীয় যানবাহন

সিএনজি

সিএনজি হলো প্রতাপুর জমিদার বাড়ির আশেপাশের সবচেয়ে জনপ্রিয় যানবাহন।

সিএনজি দিয়ে প্রতাপপুর জমিদার বাড়ি থেকে সোনাগাজী বাজার , সেবার হাট বাজার , সোনাগাজী ইত্যাদি বিভিন্ন স্থানে যাতায়াত করা যায়।

অটোরিকশা

অটোরিকশাও প্রতাপপুর জমিদার বাড়ির আশেপাশের একটি জনপ্রিয় যানবাহন। অটোরিকশা দিয়ে প্রতাপপুর জমিদার বাড়ির আশেপাশে বিভিন্ন এলাকায় যাতায়াত করা যায় খুব সহজেই এবং স্থানীয় লোকেরা অটো রিক্সায় যাতায়াতের জন্য বেশি ব্যবহার করে।

রিকশা

রিক্সাও প্রতাপপুর জমিদার বাড়ি আশেপাশের একটি জনপ্রিয় যানবাহন। রিক্সা দিয়ে জমিদার বাড়ি থেকে আশেপাশের বিভিন্ন এলাকায় যাতায়াত করা যায়।

প্রতাপপুর জমিদার বাড়ির আশেপাশের বিভিন্ন এলাকায় সিএনজি অটোরিকশা ও রিকশা পাওয়া যায় আপনি আপনার পছন্দ অনুযায়ী যে কোন যানবাহন ব্যবহার করতে পারেন।

শেষ কথা

প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও ঐতিহ্যে ভরপুর ফেনী জেলার প্রতাপপুর জমিদার বাড়ি বাংলাদেশের ইতিহাস ও সংস্কৃতির একটি অমূল্য সম্পদ এবং বর্তমানে এটি বেশ জনপ্রিয় একটি পর্যটন কেন্দ্র।

এখানে ভ্রমণ করার ক্ষেত্রে জমিদার বাড়ির ঐতিহ্য ও ইতিহাস সম্পর্কে জানার পাশাপাশি এটিকে সংরক্ষণ করাও আমাদের কর্তব্য।

Similar Posts

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।