লক্ষ্মীপুর জেলা কিসের জন্য বিখ্যাত, দর্শনীয় স্থান ও বিখ্যাত খাবার
লক্ষ্মীপুর জেলা সুপারি ও নারিকেল এর জন্য বিখ্যাত। বঙ্গোপসাগরের উপকূলীয় লক্ষ্মীপুর জেলা সুপারির রাজধানী হিসেবে পরিচিত। এছাড়া এখানকার কিছু দর্শনীয় স্থান ও ঐতিহ্যের জন্য লক্ষ্মীপুর বেশ পরিচিত।
লক্ষ্মীপুর জেলা বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে অবস্থিত একটি জেলা। চট্টগ্রাম বিভাগের অন্তর্গত এই জেলার উত্তরে চাঁদপুর, দক্ষিণে নোয়াখালী ও ভোলা, পূর্বে নোয়াখালী এবং পশ্চিমে বরিশাল জেলা ও মেঘনা নদী। এখানে মুঘল ও বৃটিশ আমলের অনেক স্থাপত্য আছে।
প্রত্যেকটি জেলাই নিজ নিজ কিছু ঐতিহ্য ও বিষয়ের জন্য বিখ্যাত হয়ে থাকে। তেমনি লক্ষ্মীপুর জেলাও কিছু বিষয়ের জন্য বিখ্যাত। আসুন জেনে নেয়া যাক লক্ষ্মীপর সম্পর্কে কিছু তথ্য এবং কেন কিসের জন্য এটি বিখ্যাত।
Table of Contents
লক্ষ্মীপুর জেলা সম্পর্কে কিছু তথ্য
লক্ষ্মীপুর জেলার আয়তন ১,৪৫৬ বর্গকিলোমিটার (৫৬২ বর্গমাইল)। লক্ষ্মীপুর জেলার জনসংখ্যা ২০১১ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী ১৭,২৯,১৮৮ জন। এর মধ্যে পুরুষ ৮,৬৬,৮৬৮ জন এবং মহিলা ৮,৬২,৩২০ জন। লক্ষ্মীপুর জেলার জনসংখ্যার ঘনত্ব ১,২০০ জন প্রতি বর্গকিলোমিটার (৩,১০০ জন প্রতি বর্গমাইল)।
লক্ষ্মীপুর জেলার ৫টি উপজেলা। এগুলো হলো, লক্ষ্মীপুর সদর, রামগঞ্জ, রামগতি, রায়পুর, কমলনগর।লক্ষ্মীপুর জেলার প্রধান প্রধান নদী হলো মেঘনা, ডাকাতিয়া, কাটাখালী, হোরাখালী এবং ছাগলচিরা।
লক্ষ্মীপুর জেলার পূর্ব নাম ছিল লক্ষ্মীদাহ পরগনা। লক্ষ্মীপুর শব্দটি দুটি শব্দের সমষ্টি: লক্ষ্মী এবং পুর। লক্ষ্মী শব্দের অর্থ হলো ধন-সম্পদ ও সৌভাগ্যের দেবী। আর পুর শব্দটির অর্থ হলো শহর বা নগর। লক্ষ্মীপুর এর অর্থ হলো সম্পদ সমৃদ্ধ শহর বা সৌভাগ্যের নগরী।
কৈলাশ চন্দ্র সিংহ রচিত ‘রাজমালা বা ত্রিপুরা’র ইতিহাসে ‘লক্ষ্মীপুর’ নামে একটি মৌজা ছিল। অন্যমতে, ‘লক্ষ্মীদাহ পরগনা’ নামক একটি পরগণা থেকে লক্ষ্মীপুর নামকরণ করা হয়েছে।
১৯৮৪ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি লক্ষ্মীপুর কে জেলা ঘোষণা দিয়ে এর উদ্বোধন করেন সাবেক রাষ্ট্রপতি ও প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক লেঃ জেনারেল হুসেইন মোঃ এরশাদ। এর আগে লক্ষ্মীপুর ছিল নোয়াখালী জেলার একটি উপজেলা। তখন লক্ষ্মীদাহ পরগনার নাম পরিবর্তন করে লক্ষ্মীপুর রাখা হয়।
লক্ষ্মীপুর জেলার প্রধান প্রধান অর্থনৈতিক খাত হলো কৃষি, মৎস্য, ব্যবসা-বাণিজ্য এবং পর্যটন।
লক্ষ্মীপুর জেলা কিসের জন্য বিখ্যাত
লক্ষ্মীপুর জেলা সুপারি ও নারিকেল এর জন্য বিখ্যাত। বঙ্গোপসাগরের উপকূলীয় লক্ষ্মীপুর জেলা সুপারির রাজধানী হিসেবে পরিচিত। তাছাড়া লক্ষ্মীপুরের দর্শনীয় স্থান ও ঐতিহ্যের জন্য লক্ষ্মীপুর জেলা বেশ পরিচিত।
১. সুপারি
লক্ষ্মীপুর জেলা সুপারির জন্য বিখ্যাত। এ জেলায় বর্তমানে প্রায় ৬ হাজার ৩৫৫ হেক্টর জমিতে সুপারি বাগান রয়েছে। লক্ষ্মীপুরের সুপারি সারা দেশে বিখ্যাত এবং এ জেলাকে “সুপারির রাজধানী” হিসেবেও পরিচিত করা হয়।
২. নারিকেল
লক্ষ্মীপুর জেলা নারিকেলের জন্যও বিখ্যাত। এ জেলায় প্রচুর পরিমাণে নারিকেল গাছ রয়েছে এবং নারিকেল উৎপাদনে লক্ষ্মীপুর জেলা বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান জেলা।
৩. ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য
লক্ষ্মীপুর জেলার রয়েছে সমৃদ্ধ ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য। এ জেলায় অনেক ঐতিহাসিক স্থাপনা ও দর্শনীয় স্থান রয়েছে, যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল:
- দালাল বাজার জমিদার বাড়ি
- তিতা খাঁ জামে মসজিদ
- কামানখোলা জমিদার বাড়ি
- জ্বীনের মসজিদ
- খোয়া সাগর দিঘী
এছাড়াও, লক্ষ্মীপুর জেলার ভৌগোলিক অবস্থানও উল্লেখযোগ্য। এ জেলাটি মেঘনা নদীর মোহনায় অবস্থিত এবং এখান থেকে বঙ্গোপসাগরের দৃশ্য খুবই মনোরম। লক্ষ্মীপুর জেলার এইসব বিষয়গুলো এটিকে একটি সমৃদ্ধ এবং আকর্ষণীয় স্থান হিসেবে পরিণত করেছে।
আরও পড়ুন:
- ফেনী জেলা কিসের জন্য বিখ্যাত
- বান্দরবান কিসের জন্য বিখ্যাত
- নোয়াখালীর জেলা কিসের জন্য বিখ্যাত
- সন্দ্বীপ কেন বিখ্যাত
লক্ষ্মীপুর জেলার দর্শনীয় স্থান
লক্ষ্মীপুর জেলার দর্শনীয় স্থানগুলি হচ্ছে:
- দালাল বাজার জমিদার বাড়ি
- তিতা খাঁ জামে মসজিদ
- কামানখোলা জমিদার বাড়ি
- জ্বীনের মসজিদ
- খোয়া সাগর দিঘী
- মেঘনা নদী
- কমরেড তোয়াহা স্মৃতিসৌধ
- রামগতির প্যারাবন
- কমলনগরের ইলিশের হাট
আরও বিস্তারিত তথ্য ও কিভাবে যাবেন তা নিয়ে জানতে পড়ুন- লক্ষ্মীপুর জেলার দর্শনীয় স্থানসমূহ।
১. দালাল বাজার জমিদার বাড়ি
এটি লক্ষ্মীপুর শহরের একটি ঐতিহাসিক জমিদার বাড়ি। এই বাড়িটি ১৮ শতকে নির্মিত হয়েছিল এবং এটি একটি সুন্দর স্থাপত্য নিদর্শন।
২. তিতা খাঁ জামে মসজিদ
এটি লক্ষ্মীপুর শহরে অবস্থিত একটি ঐতিহাসিক মসজিদ। এই মসজিদটি ১৭ শতকে নির্মিত হয়েছিল এবং এটি একটি সুন্দর স্থাপত্য নিদর্শন।
৩. কামানখোলা জমিদার বাড়ি
এটি লক্ষ্মীপুর জেলার কামানখোলা গ্রামে অবস্থিত একটি ঐতিহাসিক জমিদার বাড়ি। এই বাড়িটি ১৮ শতকে নির্মিত হয়েছিল এবং এটি একটি সুন্দর স্থাপত্য নিদর্শন।
৪. জ্বীনের মসজিদ
এটি লক্ষ্মীপুর জেলার চর আলেকজান্ডারে অবস্থিত একটি ঐতিহাসিক মসজিদ। এই মসজিদটি একটি মাটির ঢিবির উপর নির্মিত এবং এটি একটি রহস্যময় স্থান হিসেবে পরিচিত।
৫. খোয়া সাগর দিঘী
এটি লক্ষ্মীপুর শহরের একটি বিশাল দিঘি। এই দিঘিটি ১৮ শতকে নির্মিত হয়েছিল এবং এটি একটি জনপ্রিয় পর্যটন আকর্ষণ।
৬. মেঘনা নদী
এটি লক্ষ্মীপুর জেলার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত একটি বিশাল নদী। এই নদীটি একটি সুন্দর দৃশ্য এবং এটি নৌকা ভ্রমণের জন্য একটি জনপ্রিয় স্থান।
৭. কমরেড তোয়াহা স্মৃতিসৌধ
লক্ষ্মীপুর জেলার একটি স্মৃতিসৌধ। এই স্মৃতিসৌধটি বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে শহীদ কমরেড তোয়াহার স্মরণে নির্মিত।
এছাড়াও, লক্ষ্মীপুর জেলায় অনেক প্রাকৃতিক দৃশ্য রয়েছে, যেমন:
৮. রামগতির প্যারাবন
এটি লক্ষ্মীপুর জেলার রামগতি উপজেলায় অবস্থিত একটি বিশাল প্যারাবন। এই প্যারাবনটি একটি গুরুত্বপূর্ণ জীববৈচিত্র্য কেন্দ্র।
৯. কমলনগরের ইলিশের হাট
এটি লক্ষ্মীপুর জেলার কমলনগর উপজেলায় অবস্থিত একটি বিখ্যাত ইলিশের হাট। এই হাটে সারা বছরই প্রচুর পরিমাণে ইলিশ মাছ বিক্রি হয়।
লক্ষ্মীপুর জেলা একটি সমৃদ্ধ ইতিহাস ও সংস্কৃতি সম্পন্ন একটি জেলা। এ জেলার দর্শনীয় স্থানগুলি পর্যটকদের জন্য একটি আকর্ষণীয় স্থান।
লক্ষ্মীপুর জেলার বিখ্যাত ব্যক্তির নাম
লক্ষ্মীপুর জেলার বেশ কিছু বিখ্যাত ব্যক্তি রয়েছে। তাদের মধ্যে কয়েকজন হলেন:
- রুহুল আমিন: বাংলাদেশের ১৫তম প্রধান বিচারপতি।
- আবদুল হাকিম: বঙ্গীয় পরিষদ সদস্য ১৯৪৬ সাল।
- সিরাজুল ইসলাম: পার্লামেন্টে মেম্বার ১৯৭০ সাল রামগতি, রাজনীতিবিদ।
- আবদুর রশিদ: ১৯৬২ সালে কেন্দীয় আওয়ামী লীগের সাঙ্গঠনিক সম্পাদক, ১৯৬২ সালে এমপি, ১৯৭০, ১৯৭৩ সালে এমপি ও ১৯৭৫ সালে লক্ষ্মীপুরের গভর্নর নিযুক্ত।
- কাজী গোলাম মোস্তফা: বাংলাদেশী লেখক, কবি, সাংবাদিক, সম্পাদক ও রাজনীতিবিদ।
- আবুল কাশেম ফজলুল হক: বাংলাদেশী রাজনীতিবিদ ও সংসদ সদস্য।
- মুহাম্মদ আবদুল হামিদ: বাংলাদেশী শিক্ষাবিদ ও লেখক।
- আব্দুল আউয়াল চৌধুরী মজুমদার: বাংলাদেশী রাজনীতিবিদ ও সাবেক মন্ত্রী।
- আব্দুল মান্নান চৌধুরী: বাংলাদেশী রাজনীতিবিদ ও সাবেক মন্ত্রী।
লক্ষ্মীপুর জেলার বিখ্যাত খাবার
লক্ষ্মীপুর জেলার বিখ্যাত খাবারগুলোর মধ্যে রয়েছে, গিগজ ধানের মুড়ি, গলদা চিংড়ি, চিংড়ি শুটকি, মহিষের মাংসের ঝোল, মসলাদার ইলিশ, রসমালাই ও পিঠা।
গিগজ ধানের মুড়ি: এটি একটি ঐতিহ্যবাহী খাবার যা লক্ষ্মীপুর এবং নোয়াখালীর চরাঞ্চলে উৎপন্ন হয়। গিগজ ধানের মুড়ি দেখতে গোলাপি রঙের এবং খেতে মচমচে ও সুস্বাদু।
গলদা চিংড়ি ও চিংড়ি শুটকি: লক্ষ্মীপুরের মেঘনা নদীতে প্রচুর পরিমাণে গলদা চিংড়ি পাওয়া যায়। এখানকার গলদা চিংড়ি মাংসল এবং সুস্বাদু। লক্ষ্মীপুরের চিংড়ি শুটকি বিখ্যাত। এটি বিভিন্নভাবে রান্না করে খাওয়া যায়।
মহিষের মাংসের ঝোল: লক্ষ্মীপুরের মহিশের মাংসের ঝোল অত্যন্ত সুস্বাদু। এটি সাধারণত গরুর মাংসের ঝোলের মতো রান্না করা হয়।
মসলাদার ইলিশ: লক্ষ্মীপুরের ইলিশ মাছ মসলাদার করে রান্না করা হয়। এটি অত্যন্ত সুস্বাদু এবং জনপ্রিয়।
রসমালাই: এটি একটি জনপ্রিয় মিষ্টি যা লক্ষ্মীপুরের বিভিন্ন মিষ্টির দোকানে পাওয়া যায়।
পিঠা: লক্ষ্মীপুরে বিভিন্ন ধরনের পিঠা পাওয়া যায়। এর মধ্যে রয়েছে মালাই, দুধ, রসমালাই, পাটিসাপটা, চাপড়ে পিঠা, চিতই পিঠা, পাতা পিঠা ইত্যাদি।
দেশ-বিদেশে ভ্রমন সংক্রান্ত নিত্য নতুন তথ্য ও টিপস পেতে ভিজিট করুন GhuraGhuri.com
Follow Us on